থ্রিলার অবিশ্বাসী ও গোলাপী অন্তর্বাস১+২


অবিশ্বাসী ও গোলাপী অন্তর্বাস১+২

#অবিশ্বাসী_ও_গোলাপী_অন্তর্বাস ১+ ২

স্ত্রী কে চকলার উদ্দেশ্যে গাড়িতে তুলে দিয়ে বেশ খুশী মনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে একটা পিজ্জা আর বিয়ারের কয়েকটা ক্যান নিয়ে বাড়িতে ঢোকে সিজার।
তিয়াশ আসবে একটু পরেই, ওর সাথে দারুন প্ল্যান করা আগে থেকেই।
সিজারের স্ত্রী একটি বেসরকারি সংস্থায় ডাটা কালেক্টরের কাজ করে।
তাই মাঝে মাঝেই তাকে দুর্গম সাওতাল পুঞ্জিতে যেতে হয়।
সে সময় গুলো সিজার তিয়াশকে নিয়ে কাটায়, বাইশ বছরের তিয়াশা সিজারের অফিসের জুনিয়র কলিগ।
মেয়েটা শরীর তো নয় যেন একটা আগুনের আস্তানা!
বিছানায় ঝড় তোলে কত সহজে, সিজার নিজের হারিয়ে ফেলে বারবার। কত রকম নখরাই না মেয়েটা জানে!!

সিজারের স্ত্রী দশ বছর সংসার করার পরে এখন ফ্রিজিড হয়ে গিয়েছে, স্থূল শরীর, না সিজারকে জাগাতে পারে না নিজে উত্তেজিত হয়!
সিজারের ভালো লাগে না একদম, তবু সিজার বুঝতে দেয় না একদম।
প্রতিদিনই ভালোবাসি বলে মেকি আদরে ঢেকে রাখে সম্পর্ক।
মেয়েটাও বোকা, কিচ্ছু টের পায় না।
এই যে প্রায়ই সিজার অফিস শেষে তিয়াশের ফ্ল্যাটে সময় কাটিয়ে ফেরে, সেটাও ধরতে পারেনা।
নিজের মতো ব্যস্ত থাকে।
দশ বছরেও কোন ইস্যু না হওয়ায় মেয়েটা নিজের জগতে ব্যস্ত থাকে।
সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে কিচেনে চলে যায়, দারুন সব রান্না করে সিজারের জন্য। নতুন নতুন রেসিপি, কি দারুণ স্বাদ!
এসবের জন্য সিজার যেন মেয়েটাকেও ছাড়তেও চায় না।
থাকুক তিয়াশ যেমন আছে, ও তো বিয়ে করতে চায় না।
শুধু লিভিং করতে চায়, কয়েকদিন পরে হয়তো নতুন সঙ্গী খুঁজবে,  আপাতত সিজারের সাথে সময় উপভোগ করছে।

কি দারুন শরীরের গাঁথুনী, ভাজে ভাজে রহস্য, নিজেকে দারুন উত্তেজক পোশাকে সাজিয়ে সিজারের সামনে চলে আসে।

আজ সারারাত থাকবে, ভাবতেই উত্তেজনা হচ্ছে।
নিষিদ্ধ প্রণয় অনুভূতি বুঝি এমন হয়!
সসেজ গুলো ভেজে ফেলে সিজার।
তিয়াশ আসলে আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
বেডরুমটা গুছিয়ে পরিস্কার করে রাখে।

কলিংবেল বাজলো, সিজার দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
ওয়াও, কালো গাউন পরে কি মোহময় ভঙ্গিতে তিয়াশ দাঁড়িয়ে আছে।ঘরে ঢুকেই গভীর ভাবে চুমু খেলো সিজারকে জড়িয়ে ধরে।

সিজার গাউনের পেছনের চেইনটা খুলে দিলো!
কালো গাউনের নিচে গোলাপী অন্তর্বাস, আরো মোহময় করে তুলেছে তিয়াশকে।

তিয়াশ জানালো সে আগে।শাওয়ার নেবে, তারপর আসছে।
সিজার তিয়াশকে নিজেদের ওয়াশরুম দেখিয়ে দেয়।
দরজা খোলাই রাখে তিয়াশ, গভীর আহবান।
সিজার কিচেন থেকে একটা জুসের গ্লাস নিয়ে এসে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায়, তখনই কলিংবেলটা বাজে।
উফ, কে এলো এখন আবার! ভীষণ বিরক্ত হলো সিজার। জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ওটা বিছানার সাইড টেবিলে রেখে দেয়।
এটা কি কোন আসার সময় হলো কোথাও!

সিজার ড্রয়িং রুম ছাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ভীষন অবাক হয়ে গেলো!

★★★

ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে স্থানীয় টিভি চ্যানেলে,  নিউ ডমিনো রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার বাইরে ঝুলন্ত ব্রীজের নিচে একটা বিশ একুশ বছরের মেয়ের বডি পাওয়া গিয়েছে।
মেয়েটাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বডিটা একটা সাদা টাওয়েল প্যাচানো ছিলো, মনে হচ্ছে যেন শাওয়ার নিচ্ছিলো তখন আঘাত করা হয়েছে।

★★★

চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ভীষন অবাক হয়ে গেল সিজারের স্ত্রী ক্লারা।
অনেকক্ষণ ডোর বেল বাজিয়েছে, কিন্তু সিজার দরজা খুললো না।
অথচ দরজা ভেতর থেকে লক করা।
ভাগ্যিস চাবিটা ছিলো ব্যাগে।
ক্লারার এমনিতে চাবি নিতে মনে থাকে না খুব একটা।
সিজার না থাকলে কি যে হতো, ভাবতে পারে না ক্লারা।
ওর সব কিছু সিজার গুছিয়ে দেয়।
ক্লারাকে এতো ভালোবাসে সিজার।
কোন বাচ্চাকাচ্চা নেই বলে কখনো অভিযোগও করে না।
বরং স্বান্তনা দেয় যাতে ক্লারা মন খারাপ না করে।
ক্লারার ট্রিটমেন্ট করায় নিজ দায়িত্বে, প্রতিমাসে ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়।
ভাবতেই মনটা ভালো হয়ে যায় ক্লারার।
কিন্তু সিজার কই!
দরজা খুলে বেডরুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো ক্লারা সিজার বিছানায় কেমন অসংযত ভাবে পরে আছে!
এলোমেলো, আগোছালো, ক্লারার বুক কেঁপে ওঠে।
কাছে গিয়ে দেখে বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।
মাই গড, হি ইজ ডেড!!

#অবিশ্বাসী_ও_গোলাপী_অন্তর্বাস -২

ক্লারার ফোনে পুলিশ এলো বাড়িতে।
আগেরদিন থেকে সাঁওতাল পুঞ্জিতে কাজ করেছে ক্লারা, নিজের বাসায় ফিরেছে বেলা এগারোটায়।
পুলিশ আসতে আসতে সাড়ে বারোটা বেজে গেলো।
ক্লারা বিপর্যস্ত, তিয়াশের মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানে না সে।
স্বভাবতই দুটো মৃত্যু একই দিনে আবার তারা অফিস কলিগ, পুলিশ সংযুক্ত  করার চেষ্টা করলো, কিন্তু রিলেট করতে পারলো না।
তিয়াশকে উপর্যপরি ছুড়িকাহত করা হয়েছে।
মনে হয় বুকের বা পাশে নৃশংসভাবে কোপানো হয়েছে। তিয়াশের বডিতে জড়ানো সাদা টাওয়েল রক্তে ভেজা, টাওয়েল ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।
তিয়াশের জামাকাপড় কোথাও পাওয়া যায়নি।

সিজার এর শরীরে কোন আঘাত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে, তার মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন  এলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

সিজারের অফিস থেকে দেওয়া স্টেটমেন্টে কয়েকজন জানিয়েছে সিজার এবং তিয়াশকে একসাথে ডেটে  যেতে দেখেছে তারা।
কিন্তু এর বেশি তারা জানে না।

ক্লারাকে কিছুতেই বিশ্বাস করানো গেলো না সিজার একটা অনৈতিক অ্যাফেয়ারে জড়িয়েছিল তিয়াশের সাথে।

ফরেনসিক রিপোর্টে এসেছে সিজারের পেটে পয়জন পাওয়া গিয়েছে। তবে পয়জনটা সনাক্ত করতে পারেনি
এক্সপার্টরা। এটা নন পেপটাইড জাতীয় একটা রাসায়নিক, বিষ মেশানো ছিল জুসে।
এই গ্লাসে শুধু একটাই হাতের ছাপ পাওয়া গিয়েছে।
তার মানে সুইসাইড হতে পারে।

তিয়াশ খুন হওয়ার আগের রাতে সেজেগুজে তার ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছে,  এটা তার এপার্টমেন্টের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে কিন্তু কোথায় গিয়েছিলো কেউ বলতে পারেনি।
সেই কালো ড্রেসও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মাসকতক ধরে তদন্ত চললো, ক্লারা যেন বুড়িয়ে গেল কয়েকমাসে।
একরকম আনসলভড কেস হিসেবে কেসটা পরে রইলো।
যেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ক্লারা কিছুতেই বিশ্বাস করলো না, সিজার তিয়াশের সম্পর্কের কথা।

সিজারের ফোনের টেক্সট চেক করে পুলিশ জানিয়েছিলো ক্লারাকে, সিজার এবং তিয়াশের ঘনিষ্ঠতার কথা।
ক্লারা বিশ্বাস করেনি।
পুলিশ সন্দেহটা একবার ক্লারার দিকে দিতে গিয়ে তারপর আর দিলো না, কারণ ক্লারা সে রাতে সাঁওতাল পল্লীতে ছিলো।

ক্লারা একা একা থাকতে পারবে না ওর বাড়িতে।
তাই বাড়িতে এলো মিস মার্গারেট।
মার্গারেটের বয়স চল্লিশের বেশি, ডিভোর্সি।
ক্লারার বাড়িতে ক্লারার সাথে থাকবে সাথে ঘরের কাজকর্মও দেখবে।

কয়েকমাস পরে সবাই ভুলে গেলো এই ছোট্ট শহরে দুটো অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে কিছুদিন আগে।

ক্লারার কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দিলো, সে সারাক্ষণ মনে করে সিজার তার সাথেই আছে।
একা একা সে সিজারের সাথে কথা বলে।
মার্গারেট বিষয়টা খেয়াল করলো।
দুয়েকবার দেখে, সে ক্লারাকে বললো, ইউ মাস্ট নিড টু কনসাল্ট উইথ এ সাইকিয়াট্রিস্ট।
প্লিজ, গো সিস্।
প্রথম দিন ক্লারা ভীষণ রেগে গেলো।
তারপর ভাবলো,  সে যাবে।
সে সারাক্ষণ সিজারকে তার আশেপাশে দেখতে পায়, এটা কেমন অস্বস্তিকর বিষয়!
★★★
একদিন ক্লারা ফিরছিলো অফিস থেকে।
হুট করে তার মনে হলো সিজার সামনে হাঁটছে।
ও ডাকতে শুরু করলো, সিজার......  সিজার হানি, বলে।
একটা পিক আপ এর সামনে পড়তে যাচ্ছিলো, হঠাৎ নন্দিনী তাকে টেনে সরিয়ে নিলো।

ক্লারার বাড়ি থেকে কিছু দূরেই ডমিনো রেসিডেন্সিয়ালের আরেক প্লটে থাকে নন্দিনী, নন্দিনী তার মাকে নিয়ে থাকে।
প্রচুর পড়াশোনা করা নন্দিনীর কোন চাকরি করতে ভালো লাগে না।
তাই শহরের এপার্টমেন্ট রেন্টে দিয়ে সে মা কে নিয়ে পাহাড়ে চলে এসেছে বছরখানেক হলো।
নন্দিনীর সাথে ক্লারার হালকা আলাপ আছে।
নন্দিনী  ক্লারাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি ঠিক আছো ক্লারা?
ক্লারার মানবিক বিপর্যয়ের কথা সবাই জানে এই শহরের।
সবাই তাই সহানুভূতির চোখে দেখে তাকে।
 ক্লারা মাথা নাড়লো, সে ঠিক নেই।
নন্দিনী ক্লারাকে নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে বসালো।
নভেম্বরের শুরু হয়েছে, পাহাড়ী এলাকা বলে শীত পরে গিয়েছে।
ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে এক কাপ ব্ল্যাক কফি খেতে খেতে নন্দিনী কিছুক্ষণ গল্প করলো ক্লারার সাথে, হালকা আলাপে ক্লারা কিছুটা স্বাভাবিক বোধ করলো সেদিনকার মতো।
তারপর ফিরে চললো, তার কটেজে।
নন্দিনীকে তার খুব মনে ধরলো, যেতে যেতে ক্লারা মনে মনে ঠিক করলো মাঝে মাঝে নন্দিনীর সাথে আলাপ করতে যাবে।
নন্দিনীর মা ও ভীষণ অমায়িক ও আলপি।
ভীষণ পছন্দ হয়েছে মা আর মেয়েকে।


শানজানা আলম

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দশ দিকের নাম,,,

পশুর বয়স নির্ণয়,জেনে রাখুন কাজে লাগবে ।